Wednesday, January 30, 2019

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ভ্রমন - ২০১৯
Baliati Jamidar Bari
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

জানুয়ারিতে পঞ্চগড় ট্যুর করে আসলেও মন যেন বসে থাকতে চায় না, যদিও এর মাঝে বানিজ্যমেলা, বিমান জাদুঘর থেকে টু মেরে আসেছি তবুও একদিনের একটা ট্যুর করতে খুবই মন চাইছিলো । কোথায় ট্যুর করা যায় ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেল ঢাকায় থাকলেও, ঢাকার খুব কাছের জেলা মানিকগজ্ঞে আমার এখনো যাওয়া হয়ে ওঠেনি । তাই একরকম সিদ্ধান্ত নিলাম তাহলে এবার মানিকগজ্ঞেই যাওয়া যাক ।
আর সত্যি সত্যি একদিনের ভ্রমনের জন্য সুন্দর একটি জায়গাও পেয়ে গেলাম "বালীয়াটি জমিদার বাড়ি"
সপ্তাহের সাত দিনের ছয় দিনই ক্লাশ থাকলেও শুক্রবার দিনটা যেন চেয়ে থাকে আমার দিকে, নিয়ে যেতে চায় নতুন কোথাও । তাইতো শুক্রবারকে শুভদিন মনে করে মানসিক ভাবে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেল্লাম এবং ভ্রমন সংগী হিসাবে দুই জনকেও ম্যানেজ করে ফেল্লাম ।

শুরু হলো জমিদার বাড়ির দিকে যাত্রা- 

সত্যি কথা বলতে কি এই জমিদার বাড়িটি আমার মন কেড়েছে, মনের ভিতর একধরনের আঙ্খাকা জন্মিয়ে দিয়েছে । সত্যিই জমিদার বাড়িটি নিজেই তার সৈন্দর্যের প্রমান । যে কথা বলছিলাম, মানিকগজ্ঞ ঢাকার খুব কাছেই হওয়ায় খুব সহজেই এখানে যাওয়া য়ায় । গাবতলি বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস ধরে অথবা নবিনগর বাস স্ট্যান্ড থেকে সাটুরিয়া যাবার সরাসরি বাস পাওয়া যায় ।
গাবতলি থেকে জনপ্রতি ৭৫ টাকা ভাড়া আর নবিনগর থেকে জনপ্রতি ৪০টাকা । যে বাস গুলো যাবে যেমনঃ এস বি লিংক, সুভযাত্রা । বস গুলো মোটামুটি নিম্নমানের এবং সিটিং হলেও প্রচুর যাত্রি উঠায় । আর এজন্যই টিকেট কাটা সত্তেও আমাদের দাড়িয়েই যেতে হলো সাটুরিয়া বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ।
তাই এই রাস্তায় পার্সনাল গড়ি  নেয়াই ভালো, তবে অন্য একটি ওয়ে আছে এর হাত থেকে বাঁচার তা হলো - নবিনগর বাস স্ট্যান্ড থেকে যে কোন (ভালোদেখে) মানিকগজ্ঞের বাসে করে যেতে হবে কালামপুর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ভাড়া আনুমানিক ১০ বা ১৫ টাকা । এর পর কালামপুর থেকে সিএনজি করে পৌঁছে যাবে সাটুরিয়া বাজারে, ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা ।

বালিয়াটি জমিদার প্রাসাদ
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি - বাহির থেকে






বালিয়াটি জমিদার বাড়ি আর মাত্র ১০ টাকার পথ -

সাটুরিয়া বাজারে নেমে একনজরে দেখার চেষ্টা করলাম আসলে বাজারটা কত বড়, এরপরেই পেটকে শান্ত করতে চলে গেলাম হোটেলের খোঁজে, ট্যুরের সময় পারাটা মিস্টি আমার ভেবারিট একটা নাস্তা । কেন এটা আমার ভেবারিট তা পঞ্চগড় ভ্রমন পোস্টে একবার ব্যাখ্যা করেছি তাই আর করছি না । তিনজন মিস্টি পারাটা নাস্তা বিল মাত্র ১০০ টাকা ।
সাটুরিয়ার বাজার থেকে জমিদার প্রাসাদ মাত্র ১০ টাকার ভাড়ার দুরুত্ব তাই কোন ব্যাটারি চালিত রিকসা নিয়ে সহজেই যাওয়া যায় ।
সাটুরিয়া ইউনিয়ান পরিষদের পাশেই মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে ১৮ শতকের "গোবিন্দ রাম সাহা" পরিবারের সাক্ষ্য বহনকারি জমিদারবাড়িটি । এই সেই জমিদার পরিবার যাদের হাত ধরে গড়ে উঠে বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি - ভিতর থেকে


জমিদার বাড়িতে প্রবেশ-

মুল ভবনের সামনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের দুপুর করে ফেলি আর ততক্ষনে ব্যাপক জনসমগমও হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশাল টিমও এসেছে ভ্রমনে । এসেই প্রবেশের টিকেট কাটলাম জনপ্রতি ২০ টাকা করে । তবে আমরা আর সাথে সাথেই প্রবেশ করলাম না, কারন গেটে এসে জানতে পারলাম শুক্রবার দুপুর ১২:৩০ থেকে ২:৩০ পর্যন্ত মুল ফটক বন্ধ থাকে । আর আমরা যেহেতু সবাই জুম্মার নামাজ আদায় করবো তাই তাই আর ভিতরে প্রবেশ করলাম না, জামিদার বাড়ির পাশেই একটি দাখিল মাদরাসা এবং তার পাশেই মসজিদ । আমরা আসে পাশের গ্রাম পায়ে হেটে ঘুরে এসে এই মসজিদে নামাজ পড়লাম এবং দুপুরের খাবার খেয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম ।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি - মুল ফটক


অসম্ভব সুন্দর স্থাপনা কৌশল এবং কারুকাজ দেখেই বুঝ যায় কত বড় জমিদারের সৃতি বহন করছে এই প্রাসাদ । ভিতরে ৭ টি ভিন্ন ভিন্ন ভবন এবং বেশ কয়েকটি কুয়া এবং একদম শেষে একটি ঘাট বাঁধানো পুকুর । সাতটি ভবনের প্রথম ৪টি মুল ভবন যার একটিকে জাদুঘর বানানো হয়েছে আর বাকি গুলোতে প্রবেশ নিষেধ এবং পিছনের তিনটি ভবনই অন্দরমহল এগুলোতেও প্রবেশের তেমন স্কোপ নেই 😄 । ভাবনের পাশ দিয়ে নানা রঙের ফুলের বাগান সত্যিই প্রাসাদের সোন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ।

ফুল বাগান থেকে
ফুল বাগান থেকে
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
অন্দর মহলের সামন ভাগ
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
দুটি অন্দরমহলের মাঝের গলি
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
ফুল বাগান থেকে নেয়া
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
ফুল বাগান থেকে নেয়া
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
প্রাসাদের পছনের পুকুর
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
পুকুর পাড়ের বাগান থেকে



একদিনের জন্য ঢাকার পাশেই বন্ধুদের নিয়ে অথবা স্বপরিবারে ঘুরের আসার জন্য অন্যতম সুন্দর জায়গা, অন্তত জ্যামের শহর থেকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও মুক্তি মিলবে ।

ফিরে আসা-

সন্ধার আগেই সাটুরিয়া বাস স্ট্যান্ডে ফিরে এসে, অনেকক্ষন বাসের জন্য অপেক্ষা করলাম, বাস পাই তো সিট পাইনা আবার কখনো ওঠার চান্সই পাইনা । অনেকে বললো শুক্রবারেই এমন হয়, ঢাকা থেকে বেশি মানুষ আসার জন্য এমন হয়, অন্যদিন স্বাভাবিক থাকে । বাসে উঠতে না পেরে তাই আমরা ভিন্ন পথে এগোলাম । এখান থেকে সিনএজিতে করে কালামপুর তার পর বাসে করে ঢাকা কিন্তু না আমরা তা করলাম না, পথে আমরা একটা পিকআপ ভ্যান পেয়ে গেলাম আর ড্রাইভারকে বলতেই আমাদের ওঠার অনুমতি দিলো সারা রাস্তা আনন্দ করে ফিরলাম ।

ট্যুর থেকে ফেরা
পিকআপ ভ্যানে করে ফেরা



সবথেকে খারাপ লাগার বিষয়-









আমাদের সবার ইচ্ছা থাকে ইতিহাস-ঐতিহ্য এর সাথে জড়িত, সুন্দর কোন স্থান ভ্রমন করার এবং লার্নিং করার, কারো নামের সাথে কারো নামের যোগ সম্পর্ক দেখতে বা জানতে নয় । এটা আমাদের অত্যন্ত নিম্ন মানসিকতার বহৃিপ্রকাশ । এই বাজে রোগটি আমাদের ভারত উপমহাদেশেই সবচেয়ে বেশি, এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থাও নিতে হবে কর্তৃপক্ষের ।  আমাদের ইতিহাস সংস্কৃতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের, এগুলো নোংরা করা, বাজে কথা বার্তা লিখা, যেখানে সেখানে বোতল চিপসের প্যাক ফেলা সত্যিই লজ্জাজনক । আর সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে এই সব কাজ কোন অশিক্ষিত ব্যাক্তি করে না, করলেও তাদের সংখ্যা কম । জমিদারবাড়ির দেয়ালে দেয়ালে অসংখ্য মার্কারে দাগ যার বেশির ভাগ ইংরেজি বর্ণমালা এবং বাক্য, এগুলো অশিক্ষিতদের কাজ নয়, কূপ গুলো কোল্ডড্রিংস আর চিপস এর প্যাকে ভরা, ভেবে দেখেন আমরা কারা বেশি এগুলো খাই ? ভ্রমনে আমাদের অবশ্যই এগুলো পরিহার করতে হবে ।

প্রতিটা ভ্রমন আমাদের সুন্দর কিছু শিক্ষাদিক ।

I would like to describe myself someone versatile and adaptable, someone love to learn something new everyday. I love to read books and write in blogs.

0 comments:

Post a Comment

Always happy to hear from you

Contact Me
GAUSUL AZUM
+8809639-168843
Dhaka, Bangladesh